বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। প্রায় দুই দশক পর এ দলটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে পঞ্চাশের দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
এর পর ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। ওই সভায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাঙালির যা প্রাপ্তি, তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। যে দলের নেতা (বঙ্গবন্ধু) সংগঠনের জন্য মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেন, সে দলের শিকড় কত গভীরে?’ মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।
প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নাম নেয় দলটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সময় এ দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
আওয়ামী লীগের অবদান এই ক্ষুদ্র পরিসরে বলে শেষ করা যাবে না। বরং দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু রেখাচিত্র অঙ্কন করা যেতে পারে। জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। কেবল নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় নয়, শেখ হাসিনা যে কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে বলে থাকেন, তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তার নেতারা নিজেদের বর্তমানকে উৎসর্গ করছেন। কারণ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। বিশ্বের অন্যতম উন্নত রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে এটি। বিশ্বের ১১তম সুখী দেশের তালিকায়ও আছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের ষষ্ঠতম ভাষা হিসেবে বাংলা অনেক আগে থেকে স্বীকৃত। আসামের শিলচরের ভাষাসংগ্রামীদের কথা মনে রেখেও বলা যায়, আমরাই একমাত্র ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। অন্যদিকে বাংলাদেশ শক্তিশালী ১০টি মুসলিম দেশের একটি। এখানে (কক্সবাজারে) রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় লোনাপানির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন এখানে অবস্থিত। নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের দীর্ঘ সেতু নির্মিত হচ্ছে ‘পদ্মা সেতু’ নামে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সৈন্য পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
এ দেশটি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে ২৭তম, গার্মেন্টস শিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ দেশটি ২০৫০ সালে বিশ্বের অন্যতম ১০টি ক্ষমতাধর দেশের একটিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। একাত্তরের প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ করে এ দেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আসলেই লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা এবং ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়ার ইতিহাসই আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। আমরা এ দেশ নিয়ে গর্ব করতেই পারি। আর এ গৌরব অর্জনে যে দলটির সবচেয়ে বেশি অবদান, সেটি হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
সবাই এক কথায় স্বীকার করবেন যে, আওয়ামী লীগ একটি সংগ্রামী রাজনৈতিক সংগঠন। এ দলের অভ্যুদয়ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দ্বারা প্রমাণ করেছে যে, দলটি জনগণের মঙ্গল চিন্তা করে। কারণ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান অনুসরণ করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সরকারের পবিত্র দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে দলীয় আদর্শের চেয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা গুরুত্ববহ। এ জন্য আওয়ামী লীগ তার উদ্দেশ্য ও আদর্শের বাস্তবায়নে যেমন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এগিয়ে চলেছে, তেমনি জনগণের সংকট মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে।
কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন বিপুল। কারণ এ দলটি জনগণের সংগঠন। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠনের অন্যতম এ দল। আওয়ামী লীগ দেশপ্রেমিক সংগ্রামী, প্রতিবাদী, নির্ভীক ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধাবমান। উদার জাতীয়তাবাদের আদর্শের কারণে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রণীত অর্থনীতিতে বিশ্বাসী সংগঠন। রাজনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন।
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাপক। জনগণের প্রত্যাশা ও দাবি, আসুন আমরা মানুষ হত্যার রাজনীতি পরিহার করে দেশ ও জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠনমূলক রাজনীতি শুরু করি; রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনায় সহায়তা করি। কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশকে বিশ্বসভার মধ্যমণিতে আসীন করার জন্য। সফল বাংলাদেশ দেখতে হলে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই।
ড. মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
লেখার মূল লিঙ্ক: দৈনিক আমাদের সময়