‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক সেমিনার
বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের উদ্যোগে ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১৫ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলের ভিআইপি লাউঞ্জে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানে সভাপতিত্বে সেমিনারের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস।
বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পঁচাত্তরের সেই সময়টা আমাদের ইতিহাসে সবসময়ই কাটা দাগের মতো লেগে থাকবে। সে সময় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো। শিশু রাসেলকেও ছাড়া দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য ছিলো, বাংলাদেশকে আবারো পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে গড়ে তোলা। এমনটাই উদ্দেশ্য ছিলো কতজন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার। একাত্তরে হেরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তারাই এক জোট হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা যখন বিদেশে যেতাম সেখানেই সবাই এক কথাই বলতো; তোমরা সেই জাতি, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে? এসব শুনে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যেতো। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, যেদিন তিনি দেশে ফিরেন; লাখো মানুষের ঢল নেমেছিলো। সেদিন ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো, মনে হলো যেনো প্রকৃতিও হয়ত বঙ্গবন্ধু কন্যাকে স্বাগত জানাতে এসেছে। এসেই ধানমন্ডি- ৩২ এ যাবার কথা ছিলো, কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির কারণে তিনি সেখানে যেতে পারেননি। গেটে দাঁড়িয়েই মোনাজাত ধরলেন।
‘‘সেদিনই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন কীভাবে দেশের অবস্থাটা পরিবর্তন করবেন। তিনি আ.লীগের সভাপতি হয়েই সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি যেখানেই যেতেন, সেখানেই সবাই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতো; ‘এইতো শেখের বেটি এসেছে, এবার আমাদের কেউ রুখতে পারবে না।’’
মন্ত্রী বলেন, এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যিনি করেছিলেন তিনি আর কেউ নন, তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার যে কালো দাগ আমাদের কপালে লেগেছিলো, আমার মনে হয় বঙ্গোপসাগরের সব পানি দিয়ে ধুলেও সেই দাগ মুছবে না। কিন্তু এখন আমাদের মনে একটু প্রশান্তি জাগে, আমরা তাদের হত্যার বিচার করতে পেরেছি। এখন আমরা বিদেশে গেলেও বলতে পারি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আমরা করতে পারি।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন; আমি যদি ক্ষমতায় আসি তাহলে এই বাংলাদেশকে বদলে দেবো এবং তিনি এসেছিলেনও। এরপরেই ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। বঙ্গবন্ধু যে অসমাপ্ত কাজগুলো রেখে গিয়েছিলেন, সময়গুলো তিনি বাস্তবায়ন করেছিলেন। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে আজকে পরিপূর্ণ ঝুড়িতে পরিণত করেছেন। আমরা সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত হয়েছি। তার যে দূরদর্শী নেতৃত্ব এসব তারই কৃতিত্ব।
প্রধান অতিথি বলেন, আজকে বাংলাদেশের যেখানেই যাবেন সবাই বলে বঙ্গবন্ধু কন্যা ছাড়া আমরা আর কিছু বুঝি না। তিনিই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছেন। ২০০৮ সালে যখন আ.লীগ ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৬০ মার্কিন ডলার, যা এখন ২৮০০ মার্কিন ডলারের উপরে। এটি কোনো ম্যাজিক নয়, তার কাছে আলাদীনের চেরাগও নেই। এটি সম্পূর্ণ তার নেতৃত্বের কৃতিত্ব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৮ সালে আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তখন নরেন্দ্র মোদি আমাদের বলেছিলেন, তোমাদের প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এই পরিবর্তন আনলেন? কোন ক্ষেত্রে তোমরা আমাদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছো। জবাবে আমরাও বলি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশকে ও জনগণকে ভালোবাসেন। যখন মায়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশে থেকে জোর করে বিতাড়িত করছিলো, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রেখেছেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। সেদিন দেখেছিলাম তিনি এবং তার বোন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুটে গিয়েছিলেন।
সেই দৃশ্য দেখে সারা পৃথিবীর মানুষ বলে উঠলো ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’। আজ তিনি সারা বিশ্বে পঁয়ত্রিশটি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা সবার জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা বাসস্থান এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জি. মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ১৯৭২ সালে বহুদল নিয়ে বাকশাল গঠিত হয়। যদিও বলা হয় একদলীয় বাকশাল, তবে এটা মূলত বহুদলের অংশগ্রহণে গঠিত হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন জরুরি ছিল। তিনি দেশে ফিরেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে যুদ্ধ করেন। তিনি ভারতের সাথে পানি বণ্টন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমার মতো যে কাজ করেছেন সেটা তার জন্যই সম্ভব হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সহ-সভাপতি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ভাষাকে কেন্দ্র করে জাতি প্রতিষ্ঠার কথা সামনে তুলে আনলেন এবং বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করেন; এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বিনির্মাণ। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পরে উগ্র ধর্মবাদকে ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কে দিয়ে তাদের রাজনীতি করার অধিকার দিয়ে রাষ্ট্রটিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে যোজন যোজন দূরে নিয়ে গেলেন। সেখানে থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে পুনর্নির্মাণ করলেন। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কাজে প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখনো মুক্তবুদ্ধির জয়গান গাইছে। এখনো অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয়গান গাইছে। সেইখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ করেছেন। মৌলবাদী রাষ্ট্র হওয়ার পথ থেকে তিনি বাঁচালেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে একটি স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান দেশে এসেছিলেন। কিন্তু ১৭ মে যখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আসেননি। আমি মনে করি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যার পর এটা স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল না। এটা পূর্ব পাকিস্তান ছিল। সেই সময় মৌলবাদীরা রেসকোর্স ময়দানে বলতে থাকেন- তোয়াব ভাই, তোয়াব ভাই, চাঁদ তারা পতাকা চাই। সেই অবস্থা থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে পুনর্নির্মাণ করেছেন।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ আজম, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু। সেমিনারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।